বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা জাতীয় স্বার্থে দল ও ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে চাই। এই দেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ বানাতে চাই। কিন্তু আকাশে কালো শকুন ঘুরছে। এই শকুন মাঝে মাঝে ফুঁস করছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। যে যেভাবেই উসকানি দিক, আমরা ফাঁদে পা দেব না। শনিবার বিকেলে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা কখনো দেশ থেকে পালায় না। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি বলেই গত ১৫ বছরে চরম নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করে, শত শত নেতাকর্মীকে হারিয়েও আমরা বাংলার মাটি আকড়ে পড়ে থাকি। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে কারও কোনো কিছু দাবি করা লাগবে না। মন্দির, মসজিদ, মঠ, গীর্জা পাহারা দেয়া লাগবে না। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা হবে, সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে।’ আমরা আগামীর বাংলাদেশকে যুবকদের হাতে তুলে দিতে চাই। তারাই দেশের অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে পারবে।’
জামায়াত আমির আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে বেকার থাকবে না। শিক্ষিত-দুর্নীতিবাজ তৈরি হবে না। সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা না করে কর্মবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘মা-বোনরা ঘরেও সুরক্ষিত থাকবে, কর্মস্থলেও সুরক্ষিত থাকবে। তাদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় যে, আমরা ক্ষমতায় আসলে নারীদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কথা দিচ্ছি এমন হবে না।’ মহানবী (সা.) সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও নারীদের যুক্ত করেছেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে নারীদের যুক্ত করেছেন। তাই আমরা তাদের আটকে রাখার কে? তারা সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের জন্য আত্মনিয়োগ করবে। তাদের পোশাক নিয়ে আমরা বাধ্য করব না। তারা ইচ্ছামতো পোশাক পরতে পারবে।’
বিগত সরকারের আমলে গুম, খুন ও নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, জামায়াতের নেতাদের প্রহসনের বিচার করে অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন মেধাবী দেশ প্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলার জনগণ এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর সাতক্ষীরার কর্মী সমাবেশ বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কর্মী সমাবেশ উপলক্ষে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ দুপুরের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সম্মেলন কেন্দ্র করে সকালে শহরের সব রাস্তায় মানুষের ভিড়ে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কয়েক হাজার ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। তারপরও ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এখনো মাঝে মাঝে হুতুমপ্যাচা হয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। তাদের বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। আগামীর যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যেন বাংলার মাটিতে আবার কোনো স্বৈরাচার দাঁত বসাতে না পারে।’
তিনি বলেন, জামায়াতের ওপর বিগত সময়ে যে নির্যাতন হয়েছে, তার সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে সাতক্ষীরার জনগণ।
Leave a Reply